,

নবীগঞ্জে সড়ক নির্মাণের এক বছর না যেতেই ভাঙন-গর্ত :: সাংবাদিককে ঠিকাদারের হুঙ্কার

“রাস্তার কাজে অনিয়ম হয়েছে কী না আপনি প্রশ্ন
করার কে? সব জায়গায় ফাজলামি করবেন না”

স্টাফ রিপোর্টার : “রাস্তার কাজে অনিয়ম হয়েছে কী না আপনি প্রশ্ন করার কে, এই মিয়া এতদিন পর কল দিয়ে রাস্তার কথা জানতে চাইবেন কেন, ভাওতাবাজি কমিয়ে করবেন, ফাজলামি করার আর জায়গা পান নাই, সব জায়গায় ফাজলামি করবেন না” নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌশতপুর-বারইকান্দি-হালিতলা সড়ক নির্মাণের কয়েকমাসের মাথায় সড়কটি ভেঙে যাওয়া প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য জানতে গেলে এমনভাবে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ শফিকুজ্জামান শিপন।
সড়ক নির্মাণে নানা অনিয়ম হলেও প্রভাব বিস্তার করে এলজিইডির কোটি টাকার বিল উত্তোলনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে শিপনের বিরুদ্ধে। শেখ শিপনের নানামুখী অপতৎপরতা ও অনিয়ম নিয়ে সর্বমহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চৌশতপুর-বারইকান্দি-হালিতলা এক কিলোমিটার এই সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি টাকা। সড়কটির নির্মাণে গত এক বছর আগে টেন্ডার হয়। এতে মেসার্স আর এস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় হিসেবে এ পর্যন্ত ১ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার। যদিও এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠতে শুরু করেছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ৬ ইঞ্চি মেকাডম ও ২৫ মিলিমিটার কার্পেটিং করার কথা থাকলেও তা ঠিকমতো করা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় বছর না যেতেই সড়কটির এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়- সড়ক নির্মাণের বছর খানেক এর মাথায় সড়কটি বিভিন্ন জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। উঠে গেছে কার্পেটিং এবং পার্শ্বের ইট দিয়ে তৈরি গাইড দেয়াল ভেঙ্গে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত গুলো মানুষ বাঁশ দিয়ে গাইড দেয়াল দিয়ে রক্ষা করতে দেখা গেছে। সড়কের চৌশতপুর বাজার পয়েন্টে, বাইরকান্দি স্কুল এলাকায়, চৌশতপুর কবরস্থান ও মুশাহিদ মিয়ার বাড়ির সামনে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এই সড়কের ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের ফলে সড়কটি দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে এবং বিভিন্নস্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বার বার অভিযোগ দিলেও সংশ্লিষ্টরা কোন কর্নপাত করেননি। বছরখানেকের মাথায় সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী দুভোর্গ পোহাচ্ছেন।
আব্দুল করিম নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, এই রাস্তা জনগণের কোনো কাজেই আসবে না। বাজার পয়েন্টে পানি কাটার জন্য উচু করে দেয়ার জন্য বলে ছিলাম ঠিকাদার আমাদের ধমক দেন কোন কথা না বলার জন্য। রাস্তার কাজে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। উঠে যাওয়া কার্পেটিংয়ের জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে, ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কোটি টাকা হজম করেছেন।
মুশাহিদ মিয়া বলেন, আমার বাড়ির সামনে কাজের কোন নিয়মরক্ষা করা হয়নি। আমি বার বার বলার পরও ঠিকাদার মনগড়া কাজ করেছেন। তাই গাইড ভেঙ্গে গেছে এখন বাঁশ দিয়ে আমরা নিজেরা মেরামত করেছি। সড়কের মধ্যে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী শেখ শফিকুজ্জামান শিপনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “রাস্তার কাজে অনিয়ম হয়েছে কী না আপনি প্রশ্ন করার কে, এই মিয়া এতদিন পর কল দিয়ে রাস্তার কথা জানতে চাইবেন কেন, ভাওতাবাজি কমিয়ে করবেন, ফাজলামি করার আর জায়গা পান নাই”।
নবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী জোনায়েদ আলম বলেন, সড়ক নির্মাণে কোনো অনিয়ম হলে তার দায়ভার ঠিকাদারকেই নিতে হবে। সড়কটিতে কোন অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি।


     এই বিভাগের আরো খবর